হুগলি নদী, কলকাতা শহরের উন্নতিতে ‘মহাধমনী’ হিসেবে কাজ করছে। কলকাতার পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীর প্রবাহকে পবিত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং একে গঙ্গা হিসাবেও অভিহিত করা হয়, যেখানে গঙ্গা স্নান প্রথাগত আচারে এক পবিত্র বিষয় হিসেবে পালন করা হয়। নদীর এই ছোট বিস্তারটি যোগাযোগের উত্স হিসাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এর উপর চলাচলকারী নৌকাগুলি, পণ্য এবং মানুষ পরিবহনে নদীর ওপরে এবং পারাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নদীপথের বাণিজ্য ও পরিবহনে কলকাতা ছিল গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং সে কারণেই দূরবর্তী অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ধরনের জলযান কার্যোপলক্ষ্যে এখানে আসতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই গৌরবের প্রভা ম্লান হয়ে গেলেও এখনও তার কিছুটা রয়েছে এবং এজন্য আজও আমরা এই নদীতে চলার জন্য বিভিন্ন ধরণের নৌকা খুঁজে পাই। কলকাতার পুরানো আলোকচিত্রগুলিতে বিভিন্ন ধরণের নৌকা দেখতে পাওয়া গেছে এবং আশ্চর্যজনকভাবে আমরা বর্তমানে যে নৌকাগুলি দেখতে পাচ্ছি সেগুলির একই আকারগত সাদৃশ্য রয়েছে যা প্রমাণ করে যে পুরানো কলকাতা এখনও নীরবে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
কলকাতা, একটি প্রাণবন্ত শহর
কলকাতায় নৌকার গভীর প্রভাব
বাঙালি সংস্কৃতির অনুভূতি ও ঐতিহ্যে নৌকার গভীর প্রভাব রয়েছে। সেকারণে বাংলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক অংশের বিভিন্ন স্তরে নৌকার প্রতীকী উপস্থিতি পাওয়া যায়। তিনশত বছর ধরে পুরানো কলকাতার একটি সাংস্কৃতিক পটভূমি রয়েছে এবং হুগলি নদীর তীরে বিস্তার লাভের কারণে এখানে আমরা আজও নগরায়িত আকারে ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি দেখতে পাই। কলকাতার এই অংশে কুমোরটুলি (কুমোরদের গ্রাম), জেলে পাড়া (জেলেদের গ্রাম), আহিরীটোলা (দুধওয়ালাদের গ্রাম) রয়েছে। অবস্থানের জন্য জলের পাশাপাশি নৌকার সঙ্গেও গভীর সম্পর্ক ছিল এই সমস্ত মানুষদের।। কলকাতার মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনে নৌকা ঠিক কখন প্রবেশ করেছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি, তবে এটি যে ঘটেছে তা নিশ্চিত কারণ আমরা আজও বিভিন্ন আকারে নৌকা এবং প্রতিরূপের ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি। নৌ-চিহ্ন, যা কলকাতার বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব মোহনবাগানের মতো কিছু বড় সামাজিক ঘটনার প্রতিনিধিত্ব করে। কারণ, এদের ক্লাব প্রতীক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে নৌকাকে। কলকাতায় ময়ুরের মস্তকযুক্ত ময়ূরপঙ্খী নৌকার আদলে নির্মিত বাড়ির ছাদের জলাধারটি নৌকা আমাদের সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত রয়েছে এমন ধারণাী দেয় যে। নৌকার সঙ্গে একটি সংযোগ পেয়েছে দুর্গাপূজা, কারণ মা দুর্গা নৌকাকে তার চলাচলের অন্যতম যান হিসাবে ব্যবহার করেন। এমনকি সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য এই বিষয়টি মাথায় রেখে একটি নামী জুতা কোম্পানি নির্মিত আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয় নৌকা।
নৌকা শব্দের অর্থ
বাংলা শব্দ নৌকা ব্যবহার করা হলে, তা বড় এবং ছোট জলযান – উভয় শ্রেণিকেই অন্তর্ভুক্ত করে। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, নৌকা একটি বড় জলযান যেটি বাইতে হয় এবং ডিঙ্গি আকারে ছোট এবং এটি চালাতে প্যাডলিং করে প্রপালশন সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। অস্ট্রিক শব্দ ডিঙ্গি থেকে পশ্চিমবঙ্গ ‘ডিঙ্গি’র নামের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। মেদিনীপুরে সুলতানি ও খোরোকিস্তির মতো কিছু জাহাজকে বোট (নৌকা) বলা হয়। মনে হচ্ছে ‘বোট’ শব্দটি পাল সমেত বড় নৌযানকে চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়। কাকদ্বীপে, ‘কাকদ্বীপ ট্রলার’কে সর্বদা ট্রলারই বলা হয়, কখনও নৌকা বলা হয় না।
বাংলার নৌকার বিশেষত্ব
বাংলায় বোট বিল্ডিং শুরু হয় প্রথমে ‘শেল’ তৈরির মাধ্যমে, নৌকার কেন্দ্রের অংশ থেকে তক্তা লাগানো হয়, এবং তারপরে ‘গারবোর্ড’ (কিলের পাশের তক্তা) থেকে ‘স্ট্রেক’ (নৌকার পাশের উপরের প্রান্ত) পর্যন্ত তক্তা পরস্পর লাগানো হয়। তক্তাগুলো একে একে ‘পাটাম’ বা ‘জোলুই’ নামক ধাতব স্টেপ্ল দিয়ে জোড়া দেওয়া হয়।
এইভাবে হুলের একটি মসৃণ পৃষ্ঠ রয়েছে, যা ইউরোপীয় ‘ক্লিঙ্কারবিল্ট বোট’গুলির বিপরীতে যেখানে তক্তাগুলি পরস্পরকে ‘ওভারল্যাপ’ করা হয়। হালের খালি শেলটি শেষ করার পরে, জাহাজচালকরা সাধারণত ভিতরের ফ্রেমের একটি সেট যুক্ত করে।
বিখ্যাত নৌকা গবেষক, বেসিল গ্রিনহিল অনুমান করেন যে বাংলার নৌকাগুলি ‘একটি শক্তিশালী কাঠামো হিসাবে নয়, যার জুড়ে থাকা তক্তার জল-নিরোধক প্রসারিত দেহ, বরং একটি ফাঁপা পাত্র হিসাবে, পাতলা কাঠের চামচ আকৃতির, প্রয়োজনে বিপরীত টুকরো এবং ‘রিব’ দিয়ে শক্তিশালী করা হয়। কিন্তু তাদের কাছে এগুলো সবই স্বাভাবিক দেশজ প্রযুক্তি।‘
পানসি
পানসি, একটি মালবাহী নৌকা, কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ হিসেবে কলকাতা বন্দরের উজানে অবস্থিত বিভিন্ন গুদামে লবণ নিয়ে যাওয়ার জন্য এটি ব্যবহৃত হত।
শ্রমিকদের জন্য নৌকাগুলির কাজের ধরণ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল এবং লবণের পরিবর্তে এতে চর থেকে সাদা বালি (জমা করা পলি) উত্তোলন এবং বহন করছে, যা রাস্তা নির্মাণ এবং জমি ভরাট করতে ব্যবহৃত হয়, এটি বর্তমানে তাদের কাছে আরও লাভজনক কাজ। এখনও এই নৌযানগুলো কায়িক শ্রমে দাঁড় টেনে এবং মাঝে মাঝে বর্গাকার পালের সাহায্যে চালিত হয়।
পানসি মসৃণ দেহযুক্ত, খোল নির্মিত বৃত্তাকার নৌকো, এটি লম্বা ‘বিম’ এবং অগভীর অন্তঃস্থল যুক্ত। নৌকার নীচের অংশটি চামচ আকৃতির এবং কারুকাজ অন্যান্য নৌকার ধরণের তুলনায় কিছুটা ভোঁতা।
১৯৯০এর দশকে ঘুসুরিতে সম্পূর্ণ কর্মরত অবস্থায় দু’টি বোট নির্মাণের শেড ছিল যা আর নেই! শেডের মালিকদের একজন বিজয় বাবু জানান, ‘একবার ঝুসুরিতে প্রায় ২৫০ জন পানসি নির্মাতা বাস করতেন।’ নৌকা প্রস্তুতকারকদের সংখ্যা বর্তমানে হ্রাস পেয়েছে এবং কয়েকজনকে এখনও সেই পুরানো নৌকাগুলি মেরামত করতে দেখা যায় কারণ এখন আর নতুন চাহিদা তেমন নেই।
মহাজনী
যে নৌকাগুলি কলকাতার পাইকারি বাজার (পোস্তা) থেকে বিভিন্ন পণ্য বহনের জন্য ব্যবহৃত হয় তাকে মহাজনী নৌকা বলে। এসব নৌকার বহন ক্ষমতা ৮০০ থেকে ১৫০০ মণ
পূর্বে মহাজনী নৌকা সংখ্যায় বেশি ছিল এবং কলকাতা থেকে উজানে (শেওড়াফুলি, শ্রীরামপুর, চন্দননগর) এবং নিম্নধারায় (উলুবেড়িয়া, বাউরিয়া) অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে পণ্য পরিবহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত
জেলে ডিঙ্গি
মাছ ধরা পেশার মানুষরা ‘জেলে’ এবং তাদের নৌকাকে জেলে ডিঙ্গি বলা হয়, যা সাধারণত পণ্যবাহী ডিঙ্গির ক্ষেত্রে লম্বা ও সরু হয়। এগুলিও ‘শেল’ নির্মিত, চামচ আকৃতির, রাবেট এবং স্টেপ্ল বোট, যা সারা বাংলায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কখনও কখনও বাঁশ বেতের তৈরি ছোট চালা নৌকায় বিশ্রামের জায়গা হিসাবে ব্যবহার করা হয়
কলকাতার জেলে ডিঙ্গি সাধারণত ১০ থেকে ১৬ হাত (এক হাত সমান ১৮ ইঞ্চি, কাজের বাহুর কনুই থেকে মধ্য আঙুলের ডগা পর্যন্ত পরিমাপ করা হয়) দৈর্ঘ্যে।
Fishing
Boat Life
Mooring Site
Trump Card
জেলে বাছারি
নিম্ন গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে ব্যবহৃত একটি ‘শেল’ নির্মিত স্টেপল এবং রাবেট করা মাছ ধরার নৌকা। নৌকার লম্বা ও প্রসারিত আকৃতি বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার জালের জন্য সজ্জিত এবং সাধারণত ২৮ থেকে ৩২ হাতের দৈর্ঘ্য। এই নৌকাগুলি কলকাতায় মাছ ধরার জন্যও ব্যবহৃত হয়, তবে যে সমস্ত জেলেরা এই নৌকাগুলি ব্যবহার করে তারা উত্তর চব্বিশ পরগনার বাদুড়িয়ার বাসিন্দা।
খোরোকিস্তি
খোরোকিস্তি, বাংলার একটি বিশেষ আকৃতিতে নির্মিত খড়ের বাহক যার দৈর্ঘ্য পঞ্চাশ হাত (১ হাত = ১.৫ ফুট) এবং প্রস্থে ১৫ হাত। অগভীর অন্তঃস্থলের খোরোকিস্তি মেদিনীপুর জেলার জিওনখালি থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত যাত্রা করতো সাড়ে তিনশত থেকে চারশো কাহন (খড়ের পরিমাণ পরিমাপের একক) যা তারা কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহণ করত। এই নৌকাটি সম্পূর্ণভাবে হাল এবং পেছনের দিকে আয়তক্ষেত্রাকার একটি পাল দ্বারা চালিত। সম্পূর্ণ বোঝাই খোরোকিস্তি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে না পারায় ‘ছোট’ নামক একটি ছোট নৌকা এটিকে টানতে ব্যবহার করা হয়েছিল যা পরে মোটরচালিত নৌকা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত বাংলা হারিয়েছে খোরোকিস্তি।
সুলতানী
সুলতানী, নিম্ন গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের একটি ‘কার্গো বোট’ যার ধারণ ক্ষমতা ১৫০০ থেকে ৩০০০ মণ। সুলতানী ফ্রেম নির্ভর প্রযুক্তিতে নির্মিত। এটিতে হাল এবং পেছনের দিকে আয়তক্ষেত্রাকার একটি পাল থাকে। বিশেষ ধরণের তলদেশ এবং মাস্তুল এর অনন্য বৈশিষ্ট্য।
উপসংহার
বাংলার নৌকার আকৃতিগত বিস্তৃত পরিসরসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসাধারণ বৈচিত্র্য দেখা যায়। এখানে প্রকৌশল সমাধানগুলি সহজ এবং বুদ্ধিমান, এই ধারাবাহিকতা এবং উদ্ভাবন গুরু-শিষ্য পরম্পরার সীমাবদ্ধতার মধ্যে যত্ন সহকারে লালিত পালিত হয়েছে। একটি বিষয়, যা খুব জোরালভাবে অনুভূত হয়, তা হল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, আবাসস্থল এবং একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনধারা তৈরি করার জন্য সহজ সমাধান খোঁজার মধ্যে সঙ্গতি দেখা যায়।
এক সময়ের নিত্য ছন্দে স্পন্দিত নদীপথ বর্তমানে একটি সামান্য জলের চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। এখন আর ব্যবসার পণ্যগুলি এদিক-ওদিক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। আমরা এখন আর কোন শিল্পনির্মিত ঐতিহ্যবাহী পালতোলা নৌকা দেখতে পাই না। আমদের সবচেয়ে সহজ, অর্থনৈতিকভাবে সুলভ ও পরিবেশ বান্ধব পরিবহন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চলেছি এভাবে। ১৯৫০ সালের দিকে কলকাতার নদীতে যে বিপুল সংখ্যক নৌকা চলাচল করত বর্তমানে তা কমতে কমতে বিলুপ্তির দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। এমনকি ১৯৯০ সালে কলকাতা অনেকগুলি নৌকাকে হাওয়ায় উড়ন্ত রঙিন পাল সমেত যাতায়াত করতে দেখেছিল। সেগুলির উপরে এবং নীচে পণ্য বহন করে সেগুলি চলতো। কিন্তু বর্তমানে সেসবের একটিও অবশিষ্ট নেই। পোস্তা (বড়বাজার এলাকা, কলকাতা) এবং উলুবেড়িয়া (হাওড়া)-এর মধ্যে আজকাল ডিজেল ইঞ্জিনযুক্ত কয়েকটি নৌকা দ্বারাই পণ্য বহন করতে দেখা যায়। এভাবেই, বিলুপ্তির পথে চেয়ে দিন গুনছে এসব মহাজনী নৌকা (বণিক নৌকা)।
সুদেব মাঝি (অধিনায়ক)-র হাতে চালিত ভাঁর’টি আর ব্যবহারে আসে না। এই নৌকার মালিক শ্যামবাবু আর নৌকাটিও দীর্ঘদিন ধরে অলস হয়ে পরে আছে। আশ্চর্যের বিষয়, যখন শ্যামবাবুর পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তার মেয়ে আসবাবপত্র তৈরিতে ভাঁর নৌকার ‘লোহাসাল’ (এক ধরনের ব্যতিক্রমী ভাল মানের কাঠ) পুনরায় ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমনটাই এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতার ভাঁর নৌকার একমাত্র ভাগ্য। যদিও, পানসি নৌকাগুলি এখনও নদীর তলা থেকে বালুকা বহন ও উত্তোলনের জন্য লবণের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কাজের জন্যে পানসিগুলো খুবই দক্ষ। এভাবে পানসির কাজের চরিত্র বদলে গেছে। সুলতানি নুরপুর (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) কলকাতায় তার সফর বন্ধ করে দিয়েছে।
জগন্নাথ ঘাটের জেলে ডিঙ্গির সংখ্যাও ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। যদিও তাদের মধ্যে কয়েকজনকে এখনও মাছ ধরতে দেখা যায়। যদিও, পরম্পরাগত জেলে বুদ্ধদা এখন আর মাছ ধরতে আগ্রহী নন। মাছ ধরা তার প্রধান পেশা, সেটিকেই ছেড়ে দিয়ে সে আজকাল স্থানীয় বাজারে মাছ বিক্রি করে। নৌকার মাঝি ভোলার ছেলে এখন আর তার পারিবারিক পেশায় মাছ ধরায় আগ্রহী নয়, বরং অন্য কাজ খুঁজতে সে অনেকটাই ব্যস্ত। হুলো সে বাগবাজারের জেলে এখনও তার ৩০হাট জেলে বাছড়ি নিয়ে মাছ ধরতে যায়। জাল ফেলে সে খুব কমই বিদেশী ইলিশ ধরে আনতে পারে। অপরিসীম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা স্বত্বেও সে মনের অন্তর্নিহিত একটি সংশয়ের সুতো দিয়ে ভাল ভবিষ্যতের আশার বীজ বপন করে।
নৌকা কি অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে? উত্তরে, ৭০বছরের দক্ষ নৌকা নির্মাতা নিমাই বারিক বলেন, ‘যদ্দিন পানি থাইকবে, তদ্দিন নৌকা থাইকবে’। আমাদের যে জলসম্পদ রয়েছে তা বজায় রাখার জন্য একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ভীষণ মাত্রায় প্রয়োজনীয়। নয়তো, নিশ্চিত আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই গঙ্গা নদীর সমৃদ্ধ নদীকেন্দ্রিক এই আবহমান সংস্কৃতিকে অচিরেই হারিয়ে ফেলব।