কলকাতা শহরটি একটি জলজ স্থানে আবদ্ধ ব-দ্বীপের উপর নির্মিত হয়েছিল। এখানে পুকুর বা পুকুরের নির্মাণ একাধিক উদ্দেশ্যে কাজ করেছিল। সেগুলো শুধু শহরের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যই নয়, কলকাতার ঐতিহাসিক তাৎপর্যও গড়ে তুলতে অবদান রাখছে। এই জন্যেই কলকাতার অনেক সুপরিচিত এলাকাকে ‘পুকুর’-এর মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে যেমন মনোহরপুকুর, শ্যামপুকুর, বোসপুকুর, পদ্মপুকুর, বেনিয়াপুকুর, ঠাকুরপুকুর ইত্যাদি। কলকাতা শহরের প্রায় ৭০টি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে পুকুরের নামে। বর্তমানে কলকাতা পুরসভার সীমানার মধ্যে প্রায় ৫০০০টি পুকুর রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে পুকুরগুলো সেচের জন্য ও পানীয় জলের উৎস হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুকুরগুলি সাম্প্রদায়িক স্থানে বিবর্তিত হয়েছে, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, বিনোদন এবং গার্হস্থ্য ক্রিয়াকলাপের অংশ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন প্রায় ১০০০০০০ জন নাগরিককে পরিসেবা দিচ্ছে। কলকাতার পুকুরগুলি আকারে বৈচিত্র্যময়- সেখানে রয়েছে ছোট পুকুর থেকে বড় হ্রদ। কিছু পুকুর আজও বেঁচে আছে কয়েকশ বছর আগে থেকেও। প্রতিটি পুকুরের নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে, যা প্রায়শই স্থানীয় কিংবদন্তি বা ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে জড়িত। এই জলাশয়গুলি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, দুর্গা পূজার মতো উৎসবগুলিতে প্রতিমা বিসর্জন ও নৌকা প্রতিযোগিতা-সহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পটভূমি। পুকুরগুলো পরিযায়ী পাখিদেরও আকৃষ্ট করে। বিভিন্ন প্রজাতি পাখির জন্য বাসস্থানকে সরবরাহ করা এবং শহুরের ল্যান্ডস্কেপে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত হটস্পট হিসাবে কাজ করা পুকুরগুলোর অন্যতম দিক।
কলকাতার পুকুরের লোককাহিনী
কয়েক শতাব্দী ধরে পুকুরগুলি কলকাতার ল্যান্ডস্কেপের একটি অংশ মৌখিক ইতিহাস এবং স্থানীয় লোককাহিনীর বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘পুকুরের রূপকথা’ শিরোনামের শ্রী মোহিত রায়ের বইয়ে এই লোককাহিনীগুলোকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
কলকাতার পুকুরের ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য
যদিও কিছু গল্প রূপকথার সাথে যুক্ত, কিছু গল্পে ঐতিহাসিক মূল্যবোধ রয়েছে যা বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ত্ত শহরের বিখ্যাত ঘটনাগুলির সাথে জড়িত আছে ।
আগামীর পথে
যাই হোক, কলকাতার পুকুরগুলি দূষণ, দখলীকৃত স্থান এবং অবহেলার মতো নানান চ্যালেঞ্জেনের মুখোমুখি হয়। দ্রুত নগরায়ণ ও অনুপযুক্ত বর্জ্য নিষ্পত্তি ব্যবস্থার জন্যে কিছু পুকুরের জলের গুণগতমান অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে পুকুরগুলোর গুরুত্ব স্বীকার করে নিয়ে এই জলাশয়গুলিকে পুনরুজ্জীবিত ও সংরক্ষণের জন্য সরকার, এনজিও এবং নাগরিক গোষ্ঠীদের দ্বারা নানান স্তরের প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। উপসংহারে, কলকাতার পুকুরগুলি কেবল জলের সংস্থান নয় বরং সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং পরিবেশগত সম্পদকেও চিহ্নিত করছে। এই জলাশয়গুলো শহরের পরিচিতি বহনকারী, সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার সীমাহীন সম্ভাবনার দরজাকে উন্মুক্ত রাখছে।