The Flora and Fauna of East Kolkata Wetland bangla
story-icon-wetlands

পূর্ব কলকাতা জলাভূমির উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত

পূর্ব কলকাতা জলাভূমি কলকাতার পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় থাকার জন্যে গঠিত একটি প্রাকৃতিক নর্দমাজন্মিত প্লাবনভূমি। সমষ্টিগত হারিয়ে যাওয়া সাক্ষাৎ যা EKW কমিউনিটিতে কাজ করেছে- তা প্রচুর জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করছে, অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষার মাধ্যমে তাকে সচেতন করছে।
পরিচালনা
বামনঘাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, খেদাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, সমষ্টিগত হারিয়ে যাওয়া সাক্ষাৎকার, গোষ্ঠীর বিশেষজ্ঞ এবং সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা ব্যক্তি

ভূমিকা

পূর্ব কলকাতা জলাভূমি হল বিশ্বের বৃহত্তম পয়ঃনিষ্কাশনের জলাভূমি। এটি একটি রামসার সাইট। এটি পেরি-আরবান জলাভূমিকেন্দ্রিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে টিকে আছে, যারা এই বর্জ্য জলকে সংরক্ষণ করার জন্য একটি জীবিকার সুযোগ হিসাবে বিচার করেন। এই মানসিকতার সাথে তারা বিচক্ষণতা দিয়ে বর্জ্য জল ব্যবহারকে পুনঃব্যবহার করে, তা তাদের জীবিকার নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য একটি বিস্তৃত ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে চলছে।

জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি স্থানীয় মহিলারা সহজলভ্য খেজুর পাতা ব্যবহার করে এবং মাদুরের বুনন কাজ করে থাকেন। শীতকালে খেজুর গাছ থেকে গুড় তৈরি করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সম্প্রদায়টি ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। সেখানে অবৈধ জলাভূমি ভরাট, নিত্য দখল ও উন্নয়নজনিত পরিকল্পনা, বর্জ্য জলের খালগুলির দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ এসবই এই জাতীয় উৎপাদনের ব্যর্থতার কারণ হয়ে উঠছে। তাতে অর্থনৈতিক সংকট ও বেকারত্ব বৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 

জলাভূমির পথে

জলাভূমি সম্প্রদায়

পূর্ব কলকাতা প্লাবনভূমিতে মাছ চাষ, সবজি চাষ, ধান চাষ ও পশুপালনের মতো সম্প্রদায়ভিত্তিক অনুশীলন চলে। যার সাহায্যে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে শৈবাল ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে সিম্বিওটিক সম্পর্কের মাধ্যমে শহরের পয়ঃনিষ্কাশন জৈবভাবে শোধন হয়ে যায়। এইভাবে সেখানের বিদ্যমান সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যসহ খাদ্য উৎপাদন, পয়ঃনিষ্কাশন এবং নিষ্কাশনে সহায়তা করার একটা ‘ট্রাইফেক্টা’ বা ত্রিস্তরীয় সংযোগক্ষেত্র কলকাতার পরিবেশগত ভারসাম্যকে  বজায় রাখতে সাহায্য করছে।

জলাভূমিতে মাছ ধরা

পূর্ব কলকাতা প্লাবনভূমির মধ্যে জীববৈচিত্র্য

“পূর্ব-কলকাতা জলাভূমির প্রকৃতি একটি জীবন্ত সংরক্ষণাগার, একটি জাদুঘর যা স্থির রূপকে অতিক্রম করে।”

পূর্ব কলকাতা প্লাবনভূমিতে জীববৈচিত্র্য হল ৯৩টি উদ্ভিদ প্রজাতি, ১২৩ধরনের পাখি, ৭৯ধরনের মাছ, ১০ধরনের উভচর, ২৯টি সরীসৃপ, ২৪টি ক্রাস্টেসিয়ান এবং ১৩প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি শক্তিশালী পরিবার। এটিকে এই জলাভূমি কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জীববৈচিত্র্যের একটি রেকর্ড বলা যায়। শিশুরা অন-গ্রাউন্ড রিসার্চ, সেকেন্ডারি ডাটা সংগ্রহ ও বিভিন্ন শৈল্পিক পদ্ধতি যেমন ছবি আঁকা, পেইন্টিং, ম্যুরাল তৈরি করা, আলোকচিত্র তোলা, কবিতা লেখা, গান তৈরি করা, নাচ করা ও স্কিট করার মধ্যে দিয়ে বিষয়টিকে উজ্জাপন করে। এই প্রকৃতির দ্বারা পূর্ব কলকাতা প্লাবনভূমি একটি জীবন্ত আর্কাইভ হয়ে উঠেছে। যেখানে একটি যাদুঘরের স্থির রূপকে তা অতিক্রম করে দেয়। সংরক্ষণাগারটি কেবল ব্যবহারযোগ্য তথ্যের আকারেই নেই, এই সামগ্রিক প্রক্রিয়াটির সাথে জড়িত সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের দ্বারা সহ-মালিকানাধীন ও সহ-শৈল্পিক দিক থেকেও সম্পর্কযুক্ত হয়েছে। এই মিলিত অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় স্কুল শিশুদের থেকে তাদের অভিভাবক, শিক্ষক, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীদের মধ্যে তা পৌঁছে যাচ্ছে। এইভাবেই সমগ্র জলাভূমি সম্প্রদায়ের কাছে তা পৌঁছায়।

নেচার এক্সপ্লোরার্স ল্যাব

পূর্ব কলকাতা প্লাবনভূমি অঞ্চলে উৎপন্ন উদ্ভিদ-প্রাণীর একটি তালিকা তৈরি করার পাশাপাশি, ডিডি বিদ্যমান জীববৈচিত্র্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝার জন্য পূর্ব কলকাতা প্লাবনভূমির সম্প্রদায়ের সাথে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। বাস্তুবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, তরুণ শিল্পী, চিত্রকর এবং শিল্পকলা থেরাপিস্টদের সাথে সহযোগিতায় সেখানে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রকৃতি অনুসন্ধানকারী করে তোলা হচ্ছে। যাদের একটি অংশকে ল্যাবে নিয়ে একটি পারস্পরিক শিক্ষার অভিজ্ঞতার পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করা হয়েছিল। (বেশিরভাগই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী) তাদের বসবাসের পরিবেশ ও তাতে নতুন অর্জিত তথ্যের পাশাপাশি  জ্ঞানের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে।

Learning from ecology experts

একটি প্রকৃতির ডায়েরি

খেজুর গাছ- রিয়ামন্ডল, পাখি- নিবেদিতা নস্কর

তরুণরা তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষক হয়েছে তারা প্রতিটি নতুন প্রজাতির নোট নেয় ও উৎসাহের সঙ্গে সংস্থার সঙ্গে সেই উৎসাহ  ভাগ করে নেয়। তারা পূর্ব কলকাতা প্লাবনভূমির সেরা আর্কাইভিস্ট। তাদের স্থানীয় বিষয় সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ সচেতন ও তাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ের গল্প বলতেও পারে। তারা নিজেদের শিল্পকলা ও কবিতার মাধ্যমে বুলবুল, বারবেট, ময়না, ড্রংগো ইত্যাদির মতো সাধারণ পাখির সাথে বিভিন্ন প্রজাতির কিংফিশার, এগ্রেট, কর্মোরেন্টের রেকর্ড করে চলেছে। পোকামাকড়দের মধ্যে বাগ, পোকা, প্রজাপতি, কেঁচো, ড্রাগনফ্লাই, ড্যামসেলফ্লাই ইত্যাদি নিয়ে শিল্পকলা চর্চা করে। যেখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল প্রিশটোটান পোকা (ওয়াটার স্ট্রাইডার) যা জলের উপর হাঁটে।

তালগাছের বিভিন্ন রূপ ছাড়াও সেখানে গাছপালার মধ্যে রয়েছে সজনে (drumstick), সবেদা (sapodilla), শিরীষ (albizia lebbeck), কাঁঠাল (jackfruit), নোনা বা আটা (custard apple) ও আম।

পূর্ব কলকাতা প্লাবনভূমির বৈচিত্র্যময় ভূমি ও জলে জন্মানো উদ্ভিদ প্রজাতির পরিপ্রেক্ষিতটি বিস্তৃত। কিছু ভোজ্য ও অনেক ঔষধি মূল্যযুক্ত গাছ সেখানে আছে। ট্যারো একটি সবুজ শাক যা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সম্ভবত, পূর্ব কলকাতা প্লাবনভূমির সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গতিশীল সবজি এটি। শুধু ভোজ্য এবং বন্য উভয় ধরনের ট্যারো দিয়ে প্রায় এক ডজন রেসিপি প্রতিদিন বাড়িতে রান্না করা যায়। কেউ কেউ এটিকে চিংড়ি দিয়ে মশলা মেখে বা পেস্ট তৈরি করে, অন্যরা তাদের স্বাদে সেদ্ধ করে, ম্যাশ করে ও এক টুকরো লেবু যোগ করতে পারেন। এখানকার কিছু সাধারণ মাছ হল কই (climbing perch), লাইলেনটিকা (nilotica), পুঁটি (pool barb), সাইপ্রাস ও বিভিন্ন ধরনের কার্পসহ অন্যান্য।

শিক্ষার্থীরা জলাভূমির পরিবেশে রান্নার বিভাগেও নিযুক্ত হয়েছে। এখানকার অন্যতম কাজ হল খাদ্য উৎপাদন যেমন, ফল, সবজি, ধান ও মাছ। কলমি শাক (water spinach), নটে শাক (green amaranth), হিঞ্চে শাক (buffalo spinach), কুলেখারা (marsh barbel) এর মতো বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি জলাভূমির স্থানীয় সম্পদ। এগুলি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষ এগুলিকে তাদের নিয়মিত ব্যবহারের অংশ হিসাবে ব্যবহার করেছেন। একটি অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য হিসাবে, শিশুদের রেসিপিগুলি রান্নার প্রক্রিয়া বর্ণনা ও তাকে নথিভুক্ত করে বেশিরভাগ বাড়িতে একটি দৈনন্দিন কার্যকলাপের অঙ্গ করে নিয়েছে। আরও একটি আকর্ষণীয় ক্রিয়াকলাপ হল ‘সিজন ওয়াচ’ বা ঋতুর চক্রাকার আবর্তনের ফলে পরিবর্তিত প্রকৃতিকে বোঝা ও কীভাবে গাছ, গুল্ম, আগাছা সারা বছর পরিবর্তন করে তাকে জানা।

উচ্চিংড়ে

অঙ্কন- সাজদা খাতুন

বাংলায় এটিকে উচ্চিংড়ে বলা হয়। সিকাডাস হল লম্ফফন জনক পোকা। তাদের হুপগুলি খুব দ্রুত, প্রায় ১০সেমি লম্বা। তাদের যৌগিক চোখ আছে ও এদের প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়।

পানবুরি

অঙ্কন- প্রীতি মন্ডল

পানবুরি একটি বন্য উদ্ভিদ যা বেশিরভাগ জলাভূমির তীরে পাওয়া যায়। এর ঔষধি গুণ রয়েছে।

বসন্ত বৌরী

অঙ্কন- নয়না নস্কর

বারবেট বিভিন্ন ধরণের হয়। তবে এটি বেশিরভাগ বসন্তকালে দেখা যায়। একই জন্য এর বাংলা নাম বসন্ত বৌরী। পাখিটি বিশেষভাবে সবুজ পাতাযুক্ত গাছে বসে থাকে।

গঙ্গাফড়িং

অঙ্কন- কিষাণ মন্ডল

এই মাছগুলি ৬০-১০০সেমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। যার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৪০সেমি এবং ওজন প্রায় ৫০কেজি। এগুলি খুব রূপালী রঙের হয় ও শরীরে খুব ছোট আঁশ থাকে। তবে এদের মাথাটি স্কেলবিহীন হয়।

জল মোরগ

অঙ্কন- নিবেদিতা নস্কর

ওয়াটারহেনগুলি খুব সাধারণভাবে এই অঞ্চলে দেখা যায়। এদের প্রায়শই মানুষের কাছাকাছি দূরত্বে দেখা যায়। তারা জলাশয়ের কাছে গর্ত খনন করে এবং তার ভিতরে থাকতে পছন্দ করে।

সিলভার কার্ভ

অঙ্কন- অতনু ঘোষ

গঙ্গাফড়িং বেশিরভাগই জলাভূমিতে গ্রীষ্মকালে আসে। ড্যামসেলফ্লাইদের মতোই এরা আকারে ছোট। প্রায় ৩০০মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত হওয়া প্রথম ডানাওয়ালা পোকামাকড়গুলির মধ্যে এটিকে একটি বলা হয়।

ওয়েটল্যান্ড স্টুয়ার্ডস

ডিডি দেখেছেন, শিক্ষার্থীরা তাদের আশেপাশে পর্যবেক্ষণজনিত বিবরণে প্রাথমিক গবেষণা পদ্ধতি ও প্রক্রিয়াগুলি তৈরি করতে পরেছে। তা দৃশ্যমান ও পাঠ্য বিবরণের মাধ্যমে তথ্য নথিভুক্ত করার কাজে আসছে। এইভাবে শিল্পকলা ও বিজ্ঞানকে একত্রিত করে একটি মুক্তিসূচক অনুশীলন পদ্ধতি তারা প্রয়োগ করতে পারছেন। রিসোর্স সেন্টার এই অনন্য ইকোসিস্টেমের জন্য সূচকীয় মান তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছেন।

Learning from ecology experts